
ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকার অদূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের সঙ্গে এটি দেশপ্রেম ও সংগ্রামের সুতিকাগার। এখানকার প্রতিটি ইট-পাথর আর মাটি যেন স্বদেশের মাটি ও মানুষের কথা বলে: সংগ্রাম আর দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে। জাবির শহীদ মিনার তেমনই এক অনন্য স্থাপনা।
১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ৩০ লাখ শহীদের এই আত্মত্যাগের আবেগ জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে এবং শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের সর্বোচ্চ এবং মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলীতে সমৃদ্ধ শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের স্থাপত্যকর্মে চিত্রিত হয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবগাথা। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রস্থলে কলা ও মানবিক অনুষদের সামনে এই শহীদ মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে ত্রিকোণাকার রাস্তা; যা এই সুউচ্চ শহীদ মিনারকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণটি ছেয়ে আছে সবুজ ঘাস ও বাহারি রঙের ফুলের আবরণে। রাস্তার পাশের উঁচু উঁচু বৃক্ষের ডালপালার আচ্ছাদনে বর্ণিল হয়ে ওঠে স্থানটি। ১৯৫২ সালের সব অর্জনের ভিত্তি বিবেচনা করে শহীদ মিনারটির ভিত্তিমঞ্চের ব্যাস রাখা হয়েছে ৫২ ফুট এবং ১৯৭১ সালের অবিস্মরণীয় মর্যাদার প্রতি সম্মান জানিয়ে ভিত্তিমঞ্চ থেকে স্তভদ্রয়ের উচ্চতা রাখা হয়েছে ৭১ ফুট। ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১- কে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভিত্তিমঞ্চে ব্যবহার করা হয়েছে আটটি সিঁড়ি, যা স্বাধীনতা অর্জনের পথে আমাদের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে। শহীদ মিনারের স্তম্ভ তিনটিও বিশেষ অর্থ বহন করে। একটি বাংলাভাষা- সাহিত্য-সংস্কৃতি, দ্বিতীয়টি মাটি-মানুষ, প্রতিবাদ- প্রতিরোধ, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং তৃতীয়টি স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতান্ত্রিক চেতনা প্রভৃতি বিষয়কে নির্দেশ করে।
শহীদ মিনারটির স্থপতি শিল্পী রবিউল হোসাইন। ২০০৪ সালে ৬ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সব অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা জোগায় এ শহীদ মিনার।
তথ্যসূত্র: আমাদের সময়