
ইমদাদুল হক: দেশের সকল জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে দেশব্যাপী হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাভারে এইচপিভি টিকা কার্যক্রম-২০২৩ এর শুভ উদ্বোধন হয়েছে। ‘এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার রুখে দিন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন হয়।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে মর্নিং গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে বদ্ধ পরিকর। ইতোমধ্যেই সরকার টিকা দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিরুদ্ধে টিকা প্রদানের মাধ্যমে মা ও শিশু মৃত্যু এবং পঙ্গুত্ব রোধে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রমের অসামান্য সাফল্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে গ্যাভি কর্তৃক ভ্যাকসিন হিরো সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এখন ইপিআই কার্যক্রমের ইতিহাসে একটি মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা উপনীত হয়েছি, কারণ আমরা জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মত একটি প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদানের মাধ্যমে দেশকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারমুক্ত করার মহৎ যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা জানান, ইউনিসেফ, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স -গ্যাভি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র সহায়তায় পরিচালিত এই কর্মসূচি মেয়েদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে রক্ষা করবে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো, দেশের লাখ লাখ মেয়েদেরকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা । প্রতি বছর হাজার হাজার নারীর জীবন কেড়ে নেয় এই জরায়ুমুখ ক্যান্সার। এই টিকাদন কার্যক্রম প্রথমে ঢাকা বিভাগে শুরু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে বাংলাদেশের মোট আটটি বিভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচির আওতায় পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী এবং স্কুলে পড়ে না এমন ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুসহ প্রায় এক কেটিরও বেশি মেয়েদের বিনামূল্যে এই এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে।
ডা. হুদা আরও বলেন, এই টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং শিক্ষক, বাবা-মা ও ধর্মীয় নেতাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করা হয়েছে, যাতে কোনো মেয়ে এই টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না পড়ে। সাভার উপজেলায় ৬৪,০০০ কিশোরীদের টিকার আওতায় আনা হবে।
এইচপিভি টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসময় আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আশরাফুর রহমান, মর্নিং গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, প্রথম পর্যায়ে মোট আঠারো দিন এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে। টিকা গ্রহণে উপযুক্ত মেয়েরা Vaxepi অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে ঢাকায় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা মনোনীত টিকাদান কেন্দ্রে এইচপিভি টিকা নিতে পারবে। ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য বিভাগের মেয়েদের এই টিকা প্রদান করা হবে।