
বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা আনুমানিক ৮০০ কোটি। এই ৮০০ কোটি জনসংখ্যায় ৩ হতে ৪ টি প্রজন্মের বসবাস (একটি প্রজন্মের ব্যাপ্তি ২০ হতে ৩০ বছর)। এ প্রজন্মগুলো অতীত বা প্রাচীনকালের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক অভিজ্ঞ, ক্ষুরধার মেধাবী ও সচেতন ইন্ডিভিজুয়ালে পরিপূর্ণ। আব্রাহামিক রিলিজিয়নের হিসেবে বর্তমানের সর্বশেষ প্রজন্মটি ৪০০/৪৫০ তম হতে পারে। তাহলে ধারণা করেন, এই ৪৫০ তম প্রজন্মের জেনেটিক ট্রেইটে কি পরিমানে পরিবর্তন ঘটেছে (বর্ণ, ধর্ম, শারীরিক গঠন, বিশ্বাস, পরিবেশ, অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস সম্বলিত বংশানুক্রমিক পূর্বপুরুষ এর ধারাবাহিকতা বিবেচনায়)…!!
সহস্রাব্দের পরিবর্তনের চেয়ে বিগত এক শতকের বস্তুগত, ধারণাগত ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এদেরকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে। হাজার বছর আগে হয়তোবা সক্রেটিস ছিলেন, এরিস্টটল ছিলেন। তবে তাদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। এখনকার প্রজন্মগুলো এক কথায় মারাত্মক। এরা দ্রুত চিন্তা করতে পারে, পরিকল্পনা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এরা ব্যাপক সৃষ্টিশীল।
প্রজন্মের ধারণা ইউরোপের রেনেসাঁ পরবর্তীতে উদ্ভূত হলেও বিংশ শতাব্দীর পর হতে আক্ষরিক করতে প্রজন্মের স্পষ্ট বিভাজন করা হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ৩ দশকে বেশ কিছু মৌলিক আবিষ্কার ঘটেছে, বড় বড় নগরায়ন ও অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। তাই ১৯০১ হতে ১৯২৮-৩০ এর প্রজন্ম “দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন” হিসেবে পরিচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক দশক পূর্বের অর্থনৈতিক মন্দা ও বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্যাপক বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞের কারণে আমজনতা স্তব্ধ হয়ে গেছিল, যা হতে “জেনারেশন সাইলেন্স” সংজ্ঞায়িত হয় (১৯৩০-৪৫)।
এরপর স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক যুগের বিপ্লব ঘটে। মানুষের আয়েশী উপকরণ বিনির্মাণের জোয়ার শুরু হয়, বিশ্বযুদ্ধ প্রভাব ধীরে ধীরে কাটতে থাকে। মানুষ ক্রমশ পরিবারমুখী হয়। ফলে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, যা “জেনারেশন বেবী বুমার্স”কে সংজ্ঞায়িত করে। এ সময় কালে পরিবারগুলোতে সন্তান জন্মের হার বেড়েছিল।
পরবর্তীতে ৭০ দশকে ডিজিটাল যুগের উত্তরায়ন ঘটে এবং এনালগের বিদায়ী বার্তা বাজতে থাকে (Threshold Age)। এযুগের লোকজন তাই ক্লাসিক্যাল ও মডার্ন ভাবধারার সন্ধিক্ষণে থেকে নস্টালজিয়ায় তাড়িত হয় (এদের মধ্যে হা হুতাশা বেশি। এরা “আমাদের যুগে এটি ছিল, ওটি ছিল” ….এ ধরনের তুলনা দিতে পছন্দ করে)। এরা “জেনারেশন এক্স” (১৯৬৫-৮০)।
ক্যালেন্ডার ইয়ার ২০০০ অর্থাৎ 2K অর্থাৎ মিলেনিয়াম ইয়ারকে স্বাগত জানানো তরুণেরা বিশেষ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ ছিল। এদের তারুণ্যের জোয়ার আধুনিক ডিজিটাল যুগের শক্তিশালী ভিত রচনা করে। বিশ্ব সভ্যতা মুহূর্তে হাজার বছর এগিয়ে যায়। এরা “জেনারেশন মিলেনিয়াল” (১৯৮০-১৯৯৫)।
মিলেনিয়াল পরবর্তী প্রজন্ম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মধ্যেই জন্ম লাভ করে, বেড়ে উঠে। তবে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এ প্রজন্ম তুলনামূলকভাবে বেশি সৃষ্টিশীল, ভবিষ্যৎমুখী ও একইভাবে আবেগতাড়িত। এরা “জেনারেশন জি” (Gen Z), ১৯৯৬-২০১২।
প্রজন্ম থেমে নেই। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতায় বিকশিত ডিজিটাল পরিবেশে, যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় সন্তান জন্ম নিচ্ছে। এদের মনন-চিন্তাভাবনা কি হবে তা এখনো ভাবা যাচ্ছে না। এখনো পরিমাপ, মূল্যায়ন অযোগ্য এই প্রজন্ম “জেনারেশন আলফা” (২০১৩-২০২৫)।
প্রজন্ম কি শেষ ?…. না, এরপরেও আছে। দুনিয়াতে আগমনের তালিকায় থাকা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন হবে, তাদের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা, পরিকল্পনা, দর্শন কি হবে তা এ মুহূর্তে অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে আলোচিত ক্লোনিং ও রোবটিক্স রিসার্চ, স্পার্ম ব্যাংক ও হায়ার্ড ম্যাটারনিটি কনসেপ্ট, আর্টিফিশিয়াল ফার্টিলাইজেশন, এডভান্সড জেনেটিক্স স্টাডি, হাল প্রজন্মের ডিকেইং রাইসাশনেস ট্রেন্ড, ব্রোকেন ফ্যামিলির প্রভাব ইত্যাদি আসন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভিন্ন রকমে প্রভাবিত করবে নিঃসন্দেহে।
লেখক: ওয়াহিদ আজাদ