সর্বেশেষ
গণঅভ্যুত্থানের সুফল ধরে রাখতে যুব সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে : এ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন খুলনার সমাবেশে মিছিল নিয়ে পিরোজপুর -নাজিরপুরের বিএনপি, ছাত্র-যুবদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নতুন অ্যাপ উদ্বোধন, রয়েছে ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ খুলনার যোগীপোলে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি সমাবেশ শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. ওবায়েদুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেছেন ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ করা ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই সাভারে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী গ্রেফতার আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে বৈধ গ্রাহকদের ভোগান্তি ডিবি'র অভিযানে পিস্তলসহ গ্রেফতার ১ নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন দিলো পাষন্ড স্বামী
Home / অপরাধ / ও দেশ // সৌমিত্র চক্রবর্তী

ও দেশ // সৌমিত্র চক্রবর্তী

 

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই চব্বিশ বছর পাকিস্তান শাসনে ছিল বিভক্ত বাংলার টুকরো। পূর্ব ও পশ্চিম নামকরণেই ছিল বিচ্ছিন্নতার আভাস। আসলে পাকিস্তানের শাসকেরা কখনোই পূর্বপ্রান্তের এই ভূমিকে তাদের উপনিবেশের বেশী কিছুই ভাবতে পারত না। আর এর কারনও ছিল বহুমুখী। ভাষাগত, খাদ্যাভ্যাসগত, সংস্কৃতিগত পার্থক্য কোনোদিনই দুই প্রান্তকে কাছে তো আনেইনি, উল্টে শাসকের অহমিকায় দূরে ঠেলে দিয়েছিল।
আপাদমস্তক গরীব এই অঞ্চল থেকেই চব্বিশ বছর পাকিস্তান লুঠ করে তাদের রাজধানীতে নিয়ে যেত শষ্যসম্পদ থেকে জাত বিপুল পরিমাণে কর। অথচ উন্নয়ণের জন্য ফেরত আসত না কিছুই।
সাম্রাজ্যবাদী শাসকের শাসনযন্ত্রের নিয়মে পূর্ব পাকিস্তানে তখন বাসা বেঁধেছিল মূল পাকিস্তান ভূখণ্ডের কিছু লোক আর সাতচল্লিশে দেশভাগের সময়ে ভারতের বিহার, উত্তরপ্রদেশের কিছু মানুষ। কিন্তু পূর্বপ্রান্ততে বাসা বাঁধলেও, তারা উর্দু, আরবী বা ফার্সি না জানা বা বলা বাঙালিদের মানুষ বলে মনেই করত না। তারা ছিল মূল শাসকদের এজেন্ট। এরাই পরবর্তীতে রাজাকার, আলবদর এর মত কুখ্যাত হত্যাকারী সংগঠনগুলির স্রষ্টা।
মৌলানা ভাসানী, শেখ মুজিবরের নেতৃত্বেই যে প্রথম ওপারের বাঙালি মাথা তুলেছিল তা নয়। তাদের শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ছিল ভাষা আন্দোলন। এরপরও ছোটখাটো কিছু আন্দোলন দানা বাঁধলেও বিস্ফোরণ ঘটলো ১৯৭০ এ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রায় কে গায়ের জোরে পাকিস্তানি শাসকেরা রদ করতে চাওয়ায়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিম্বা তার আগের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্য এই প্রতিবেদন নয়। ইতিহাস সবার জানা, বহু চর্চিত। আমরা শুধু প্রেক্ষাপট বুঝতে বেশ কিছুটা পেছনে একটু অনুসন্ধানে যাই।

পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেয়ে অন্য বৃহৎ ক্ষমতাশালীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। পাকিস্তান নির্ভরশীল ছিল আমেরিকার ওপরে। অথচ প্রায় সমসাময়িক স্বাধীনতা লাভের পরেই চীন বা জাপান অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল শুধুমাত্র নিজস্ব ভাবনা আর উদ্যোগে। বৃহৎ রাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থেই এই নবগঠিত দেশ কে মদত দিতে শুরু করল, কারন ভৌগলিক অবস্থানের সুবাদে এই দেশ অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। বড় দেশের দাদাগিরি বা স্বার্থ বজায় রাখতে এরকম পরনির্ভরশীল একটা দেশ তাদের হাতে রাখা অবশ্যম্ভাবী ছিল।

আর এখানেই শুরু হল ধর্মীয় মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত। জিন্নাহ্ আর যাইহোক মৌলবাদী ছিলেন না। কিন্তু তাঁর চারপাশে আবর্তিত মৌলবাদ ঠেকানোর কোনো চেষ্টাই তিনি বা তাঁর দল করেনি ভোটের মুখের দিকে তাকিয়ে। অশিক্ষিত, হতদরিদ্র সে দেশের মানুষগুলোকে যে শুধু ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে এক ছাতার তলায় এনে নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ প্রশস্ত হয়, তা তাঁর দল ততদিনে বুঝে গেছিল। আর এরা ক্ষমতায় থাকলে বৃহৎ শক্তিরও এই অঞ্চলে ছড়ি ঘোরাতে সুবিধা হয় বলে তারাও এতে হয় চোখ বুজে ছিল নয়তো অর্থ, সরঞ্জাম দিয়ে বাড়তে সাহায্য করে চলেছিল। সাধারণ জনতা এই কূটকথা বুঝতেই পারেনি।

পুরাকালে ভারতবর্ষের পরিধি ছিল আফগানিস্তানের কাবুল (গান্ধার প্রদেশ) থেকে নাগপ্রদেশ (বর্তমানের অরুনাচল)। এখনকার মায়ানমার ছিল অন্য দেশ, আর উত্তরে ছিল ইলাবৃতবর্ষ (বর্তমানে তিব্বত)। এই বিশাল এলাকা ভারতবর্ষের অন্তর্গত হলেও বিভিন্ন স্বাধীন শাসকের শাসনে থাকত। এই এলাকা থেকে মুঘল আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গান্ধার প্রদেশ হয়ে গেল পাঠান ভূমি। ইংরেজ আমলে ক্রমাগত বিদ্রোহে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন দেশ হয়ে গেল তরাই অঞ্চল।
রাজনীতির কান্ডারীরা যাই করুন না কেন, এই বিশাল ভূমিখন্ডের সাধারণ মানুষ কিন্তু এসবে মাথা ঘামাত না, সত্যি কথা বলতে তারা এত বিভেদের বৃত্তান্ত জানতোও না। রুটি রুজির জোগাড়ে সীমান্ত অতিক্রম করা তখন অন্যায় ছিল না।

৪৭ পরবর্তী পাকিস্তানের শাসকেরা ছিল উচ্চবর্ণের এবং রীতিমতো ধনী সম্প্রদায়ভূক্ত। এরা প্রায় সকলেই ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষিত। আমজনতার শিকড়ের সমস্যা সম্পর্কে এরা কেউই খুব একটা ওয়াকিবহাল ছিল না। রাজতন্ত্র নামেই বিদায় নিয়েছিল। রাজা মন্ত্রী নবাব উজির নাজিরের দল ক্ষমতা ভোগ করছিল নিজেদের মধ্যে গোপণ আঁতাত এবং প্রকাশ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়ানোর কূট খেলা খেলে।

এই সহজ রাস্তার সন্ধান তারা পেয়েছিল ৪৬ – ৪৭ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়েই। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এতে ইন্ধন যুগিয়ে ছিল অপসৃয়মান ইংরেজ শাসক।
এদিকে দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনের ছায়ায় থাকতে থাকতে ঔপনিবেশিক শাসকের সমস্ত খারাপ ধ্যানধারণা মজ্জায় মজ্জায় ঢুকেছিল ওই উঁচুতলার শাসকদের মধ্যেও। দুই স্বতন্ত্র দেশ ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের আলাদা বৃত্ত গড়ে নিল। অথচ একটু চেষ্টা করলেই বিভাজনের কষ্ট ভুলে সৌহার্দ্য বাড়ানো যেত অনায়াসে। কিন্তু সেই সৌহার্দ্য চায় নি পাক শাসকেরা কারণ পাকিস্তানকে ততদিনে গ্রাস করেছে অন্ধ মৌলবাদ। প্রাদেশিকতায় আচ্ছন্ন পাকিস্তানের উচ্চসম্প্রদায় ভারত থেকে আসা উদবাস্তুদের গায়ে ছাপ মেরে তাদের করে দিল স্বতন্ত্র দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মোহাজির। সিন্ধপ্রদেশের বালুচিস্তান অবহেলিত রয়ে গেল। আর পূর্ব পাকিস্তান হল উপনিবেশ। পূর্বের প্রদেশের জন্য বরাদ্দ হল চরম অবহেলা।

বঞ্চনা আনলো চরম দারিদ্র্য, দারিদ্র্য আনলো ক্ষোভ। ক্ষুব্ধ প্রজন্ম আবেদন নিবেদনের রাস্তা ছেড়ে হাতে তুলে নিল অস্ত্র। অশিক্ষিত এইসব বিদ্রোহীরা খুব সহজেই ধর্মের নামে মিথ্যা প্রচার করা ক্ষমতালোভীদের খপ্পরে পড়ে গেল।
সে দেশে প্রথম দিকে মৌলবাদকে মদত দিয়েছিল শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল উপনিবেশ পূর্বঅংশকে তাঁবে রাখা। ফলে উত্তর বা পশ্চিমের পাক অঞ্চলে বিষবৃক্ষ হয়ে বাড়ছিল উগ্রবাদ।

নিরীহ বাঙালি বহুদিন চুপ করেই ছিল। আগেই বলেছি, ভাষাআন্দোলনের মত কিছু অরাজনৈতিক ক্ষোভ ছাড়া তারা মোটামুটি মেনেই নিয়েছিল বঞ্চনার ইতিবৃত্ত। তলেতলে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল কিন্তু বিস্ফোরণের স্তরে পৌঁছে যায়নি।

সেই ৪৭ এ অনেক স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। ভেবেছিল ইংরেজ গেলে স্বর্গরাজ্য হবে। প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটেছিল। মানুষকে বোঝানো হয়েছিল স্বাধীনতা মানেই দুর্নীতির অবসান, স্বাধীনতা মানেই দারিদ্র্য মুক্তি। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, ইংরেজ আমলে তাদের চাটুকারবৃত্তি করে যারা রীতিমতো পরাক্রমশালী আর ধনশালী হয়ে উঠেছিল, তারাই মাছির মত শাসন মধুর চারপাশে ভীড় জমালো। আর আশ্চর্যজনক ভাবে তারাই ক্ষমতার চাবিকাঠি পেতে শুরু করল। সেই সময়ে পাকিস্তানের অবস্থা স্বতন্ত্র কারনে বিভাজিত হচ্ছিল।

সীমানার ওপারে বিভাজনের সমস্যা বুঝতে আরোও পিছিয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর প্রথম ধর্ম ভিত্তিক দ্বেষ এবং তার আধারে যুদ্ধ ছিল ক্রুশেড। খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মের এই বিবাদও আধারিত ছিল সাম্রাজ্য কেন্দ্রিক মূলতঃ ভূমি দখলের লড়াই। আসলে তখন ওই জাতীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে যুদ্ধে পরস্পর বিবাদমান প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্রিত করে মুসলমান শাসকদের সাম্রাজ্য দখলের ফন্দির হোতা ছিল ইউরোপ। ধর্মীয় জিগির তুলে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা সেই শুরু।
চারশো বছর অতিক্রান্ত তবু সেই অপচেষ্টা সমানে অব্যাহত। ইউরোপের সাম্রাজ্য সূর্য অস্তমিত হলে আসরে নামলো আমেরিকা। পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য বহাল রাখার জন্য তারা যেকোনো কুকাজ করতে পিছপা হলো না। ধর্মীয় জিগির তুলে হোক কিম্বা সুশিক্ষিতের ছদ্মবেশে হোক দুনিয়ায় তাদের থাবা কায়েম হচ্ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর সময়ে পরমানু শক্তিধর আমেরিকা নিজের স্বার্থে বিভিন্ন দেশে নিজের প্রতিনিধি বসানোর চেষ্টা করছিল। ফলস্বরূপ তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়া আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে দ্রুত বিভিন্ন উপায়ে শাসক পরিবর্তন ঘটছিল। আগেই বলেছি ভারতীয় উপমহাদেশ সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এর চতুর্দিকে শক্তির আকর এর খনি। তাই ইরান, ইরাক, তুরস্ক, সৌদি আরব, লেবানন, আরব আমীরশাহী, ইজরায়েল সমেত মধ্য এশিয়া করায়ত্ত করার পরেও তাদের দরকার ছিল উপমহাদেশের মালিকানা। একদিকে রাশিয়া অন্যদিকে চীন হয়ে উঠছিল প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি।
ভারত নিজেকে জোট নিরপেক্ষ ঘোষণা করেও রাশিয়ার মিত্রজোটে সামিল হয়ে গেল। অতএব পাকিস্তান কে যেন তেন উপায়ে নিজের দিকে টানতেই তার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে লাগলো আমেরিকা। সামরিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক সবরকম সাহায্য অবাধে আসতে লাগলো। মধ্য এশিয়ায় অবাধ্যদের শায়েস্তা আর রাশিয়াকে সহবত শেখানোর জন্য তৈরী হল ফ্রাঙ্কেস্টাইন সাদ্দাম হোসেন, বিন লাদেন ইত্যাদি এবং তাদের সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানেও গণতন্ত্র ভন্ডুল করে নিজের জোহুজুর কে বসানোর জন্যই এভাবেই সাদ্দাম বা লাদেন যুগের কয়েক দশক আগেই হয়েছিল আমেরিকার প্রচ্ছন্ন মদতে সেনা অভ্যুত্থান।

জিন্নাহ্ যুগ যে পাকিস্তানের স্বর্ণযুগ ছিল, তা বলব না। কিন্তু এই সময়ে অন্তত সেই দেশের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক ধর্মীয় শাখার বিবাদ ছিলনা। ছিল গণতন্ত্র। ছিলনা আমেরিকা বা কোনো বৃহৎ শক্তির চাটুকারবৃত্তি। উচ্চশিক্ষিত এই মানুষটির সম্পর্কে বিরোধী মৌলবাদীরা যাই প্রচার করুক, কিম্বা শাসক হিসেবে তাঁর সাফল্য অসাফল্যের যতই চুলচেরা বিচার হোক, মানুষ হিসেবে জিন্নাহ্ সাহেব ছিলেন সাচ্চা। নরমপন্থী চিহ্নিত করে জিন্নাহ্ কে গান্ধীর মতোই ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে ক্ষমতাহীন করার কাজ তলেতলে শুরু হয়ে গেছিল তাঁর জীবিতকালেই।
জিন্নাহ্ শাসনের অন্তকেই ধরা যেতে পারে উপমহাদেশের কালো অধ্যায়ের সূচনা। জেনারেল আইয়ুবের সময় থেকেই পারস্পরিক দ্বেষে বিভাজিত হতে থাকল প্রাচীন ঐতিহ্যের সুসভ্য সমাজ।

পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুটি ইস্কান্দার মির্জা ও লিয়াকত আলি খানের শাসনকাল ছিল গণতান্ত্রিক। যদিও রাষ্ট্রের ঘোষিত নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব পাকিস্তান। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত এক অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে যেতে হয়েছিল। এই সময়ে ছয় জন প্রধানমন্ত্রী পদ পেয়েছেন এবং দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অপসৃত হয়েছেন।
গণতন্ত্রের এই দুরবস্থা সৃষ্টির জন্য আপাতদৃষ্টিতে সেখানকার ভঙ্গুর শাসনকাঠামো কে দায়ী করা হলেও আসলে এর পেছনে ছিল আমেরিকার আগ্রাসনের ইচ্ছা। পাকিস্তানে গণতন্ত্র কায়েম থাকলে সেখানকার সিস্টেম কে দিয়ে নিজের স্বার্থে কাজ করানো সম্ভব নয় জেনেই ১৯৫৮ তে জেনারেল আইয়ুব খান কে দিয়ে ক্যু ঘটিয়ে শাসনযন্ত্র দখল করানো হলো।

কিন্তু মিলিটারি স্বৈরশাসনের ওপরে ভরসা রাখলেও সেখানে মৌলবাদকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন তখনো পড়েনি। ধর্মপালন সব দেশেই সাধারণ মানুষের এক অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে এই ধারণা সেই প্রাচীন কাল থেকেই মনের মধ্যে বাসা বেঁধে আছে। কিন্তু ধর্মপ্রচারকরা সব ধর্মেই কখনো হানাহানির কথা বলেননি। সর্বদাই শান্তির কথা, পবিত্রতার কথা, সৌহার্দ্যের কথা বলেছেন। অথচ সেই মহাপুরুষদের বাণী বিকৃত করে একদল কুচক্রী সেই সময়েই সক্রিয় হচ্ছিল ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাষ্ট্র তখনো তাদের কাজে লাগায়নি।

আইয়ুবের দেখানো রাস্তা ধরেই ক্ষমতায় এলেন ইয়াহিয়া খান – জুলফিকার আলি ভুট্টো জুটি। আর ক্ষমতায় এসেই উপনিবেশ পূর্বের ওপরে শোষনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন তাঁরা। এদিকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদের সামনে সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু চালে একটু ভুল হয়ে গেল। আয়তন অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের সাংসদ সংখ্যা যে নীতিনির্ধারক হয়ে উঠতে পারে এই গণনা সম্ভবত স্বৈরশাসকরা করেন নি। দেশের দুই অঞ্চলেই তখন পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কুশাসনের জন্য জমেছে ব্যাপক ক্ষোভ। তরতর করে বাড়ছে আওয়ামী লিগের জনপ্রিয়তা। মুসলিম লীগের বিরোধী সব দলই তখন গ্রহণযোগ্য। আর এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই হলো নির্বাচন।

হরেকরকম দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও শেষরক্ষা হলোনা। ক্ষমতা হস্তান্তর অবশ্যম্ভাবী জেনে সক্রিয় হয়ে উঠলো গণতন্ত্র বিরোধী সবকটি অশুভ শক্তি। যেনতেনপ্রকারে নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক সাংসদপদ বিজয়ী আওয়ামী লিগ এবং বিরোধী জোটকে ক্ষমতায় আসা আটকাতে তড়িঘড়ি কারারুদ্ধ করা হলো শেখ মুজিবর রহমান সহ প্রথম সারির নেতাদের। আলোচনার সব প্রয়াস ভেস্তে দেওয়া হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে। পূর্বের উপনিবেশে পাকিস্তানের যেসব এজেন্সি তাদের স্বার্থরক্ষায় নিযুক্ত ছিলো, যেমন আলবদর, রাজাকার ইত্যাদি এই সংগঠনগুলোর শক্তিবর্ধন করে দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রতিরোধের কাজে সামিল করা হল। আর নামানো হল সেনাবাহিনী। ঠিক সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পাকিস্তান মৌলানা ভাসানী সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের চেষ্টা করেও গ্রেপ্তার করতে পারে নি। ভাসানী ভারতে পালিয়ে এসে জনমত ও রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন। একদিকে পূর্ব পাকিস্তানের পিষ্ট বাঙালি হাতে তুলে নিচ্ছিল রাইফেল অন্যদিকে কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে পূর্বের অংশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন স্বতন্ত্র সত্তা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে গেল। মজার ব্যাপার এই ভীষণ দুর্দিনে কোনো পীড়িত মানুষের মনে ধর্মের নামে অধর্মের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনা উঁকি দিতে পারেনি কারণ সেই সময়ে লড়াইয়ের মুখ্য চরিত্রে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ মৌলবাদী ছিলেন না।

সমগ্র উপমহাদেশ তখন কাঁপছে স্থিতিশীল সুশাসনের অভাবে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই ৭০ এর নির্বাচন হলো পাকিস্তানে। জনরায়ে ব্যাপক হার সেখানকার শাসকেরা মেনে না নিয়ে নির্বাচনের রায় ভন্ডুল করে পূর্ব অংশে সর্বার্থে মিলিটারি শাসন জারীর কুচেষ্টা করে লেলিয়ে দিল আলবদর, রাজাকার ও আর্মি। তছনছ হয়ে গেল সামাজিক, অর্থনৈতিক বন্ধন। কাতারে কাতারে শরনার্থী পালিয়ে আসতে শুরু করলো এপারে।
এমনিতেই এপার বাংলার অর্থনীতি ভারতের সাথে জুড়েই তখন বিপর্যস্ত। তার ওপর এত বিপুল পরিমাণে শরনার্থীর চাপে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠলো।
এপারের বাঙালি কিন্তু অসীম সহ্যশক্তি নিয়ে জায়গা ছেড়ে দিতে লাগলো তাদের। কিছু রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থনে পাশে দাঁড়াল। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে শিবির গুলোতে হানা দিতে লাগলো মহামারী, ক্ষুধা। প্রচুর মানুষ মারা গেল এপারে এসেও।

ক্ষমতার নেশা সবচেয়ে মারাত্মক। যার মধ্যে এ নেশা বাসা বাঁধবে, সে মঙ্গলের পথ ছেড়ে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেকোনো পথ গ্রহণ করতে একটুও দ্বিধাগ্রস্ত হবে না, হোক তা অমানবিক কিম্বা অসাংবিধানিক। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, নিজের অপদার্থতা ও কুশাসনের ক্ষোভ আড়াল করার জন্য ক্ষমতার কারবারীদের প্রধান রাস্তা দুটি। যুদ্ধ এবং অকারণ ধর্মীয় উন্মাদনার বেড়াজালে মানুষকে জড়িয়ে মত্ত করে দেওয়া। ৬০ এর দশকে বা তার আগের কুশাসনের গলিত কুষ্ঠ তখন দগদগে ঘা হয়ে ফুটে উঠছে পাক দেশের নাপাক গায়ে।

এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে বড় উদ্বেগের কারন ছিলো, পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে আমেরিকার সপ্তম নৌবহর এর ঘাঁটি গাড়ার হুমকি। এটা হলে উপমহাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ভারসাম্য যে নষ্ট হয়ে যাবে তা বুঝতে সময় লাগেনি ঝানু রাজনীতিবিদদের। ঠিক ওই অবস্থায় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রহসন অন্তে মুজিব গ্রেপ্তার। আর্মি ও হন্তারক দালালদের দাপাদাপি। আর একঝাঁক মুক্তিকামী গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে এলেন এপারে। গড়লেন স্বাধীন সরকার।

যুদ্ধের ঠিক আগে ইন্দিরা, উদ্বাস্তু সমস্যা এবং উদ্ভুত রাজনৈতিক ও মানবাধিকার হত্যার পরিস্থিতি নিয়ে দরবার করলেন স্বয়ং আমেরিকায় গিয়ে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কাছে তখন সুবর্ণসুযোগ উপমহাদেশ করায়ত্ত করার। ইন্দিরাকে দেখা করার সময়ই দিলেন না তৎকালীন ইউএস প্রেসিডেন্ট। অপমানিত, ক্ষুব্ধ ইন্দিরা দেশে ফিরেই যুদ্ধ ঘোষণা করলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

নিজের শিকড় যদি অজানা থাকে, তাহলে বর্তমানের সংকটের স্বরূপ বোঝা যায়না। আমজনতা এমনিতেই এতরকম সমস্যায় জর্জরিত যে জন্মের আগের ঘটনা সম্পর্কে আগ্রহী হয়না। কিন্তু অসুখ যখন দুরারোগ্য আকার নেয়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ড জানা জরুরী হয়ে পড়ে নাহলে সঠিক চিকিৎসা জোটে না।

ইন্দিরা গান্ধী যেদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সে দিনটা ছিল ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৭১। ঠিক তার পেছনের বছরে ১৯৭০ থেকে সমস্যার শুরু হয়েছিল, যখন পাকিস্তানের নিম্ন পার্লামেন্ট কক্ষ মজলিস ই শুরা র ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৯ টিই জিতে নিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লিগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তারা যেই শাসন ক্ষমতার দাবীদারত্ব পেশ করল, ওমনি বেঁকে বসল হেরে যাওয়া জুলফিকার আলি ভুট্টো র নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। পাকিস্তানকে তারা কিছুতেই নাপাক বাঙালিদের হাতে তুলে দেবেনা।
ভাবুন একবার, ভোটে এতদিন লড়াইয়ের সময়ে, শোষনের সময়ে যারা নাপাক ছিল না, ক্ষমতা হস্তান্তরিত করার পরিস্থিতি আসতেই তারা অপবিত্র অধার্মিক হয়ে গেল! আসলে, পশ্চিমীদের এছাড়া অন্য উপায় ছিলো না। গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে তারা পরাজিত। পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া বিশেষ গর্হিত নয় এটা শিশুও জানে। তাহলে?

পাকিস্তান তখন নিজেই দুখানা বৃহৎ দুষ্কর্মে জড়িয়ে ছিল। প্রথম যেনতেনপ্রকারে পুর্বকে শোষণ আর তার নানা কৃৎকৌশল, ফন্দিফিকির। আপাত নিরীহ পূর্ব এটা জেনে গেলে বিপদ এতদিনের শাসকদের। তাই আপত্তি। আর দ্বিতীয় আপত্তি আরোও জোরালো কারনে, যার পেছনে আমেরিকা। রাশিয়া সহ পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাঁবে আনা আমেরিকার ব্যবসায়ী মহলের কাছে ছিল জরুরী এজেন্ডা। অথচ ক্রমাগত আরব ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তি সঞ্চয় করে চলেছিল রাশিয়া। ধর্মীয় ছদ্মবেশে গেরিলা বাহিনী তৈরির জন্য পাকিস্তানকে ব্যবহার করলো উদ্বিগ্ন আমেরিকা। জঙ্গীবাদের জন্ম সেই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানেই হলো। বার্থ সার্টিফিকেটে বাবা আমেরিকা, মা পাকিস্তান। এখন এই হাই প্রোফাইল গোপন তথ্য পূর্ব জেনে ফেললে সব পন্ড হবে এই আশঙ্কায় গড়ালো গভীর ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পূর্বতে সৈন্য পাঠালেন, অস্বীকার করলেন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে।
নিত্য বনধ, আইন অমান্যের মধ্যেই ২৫শে মার্চ মাঝরাতে মুজিব কে গ্রেপ্তার করে উড়িয়ে আনা হল মূল পাকিস্তানের জেলে। ঘোষণা হল জরুরী অবস্থা। বিপুল সৈন্য ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরীহ জনতার ওপরে। একদল আওয়ামী লিগ নেতা পালিয়ে এলেন ভারতে। ভারত থেকেই তাঁরা গঠন করলেন মুক্তি যোদ্ধা নিয়মিত এবং গেরিলা বাহিনী। ত্বড়িৎ গতিতে কিছু পাক এজেন্ট ছাড়া প্রায় আপামর পূর্বীয় মানুষ এই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিলেন। সরকারি হিসেবে শুধু নিয়মিত যোদ্ধাই ছিলেন ১৭৬০০০। ভারতে থেকেই গঠিত হলো স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। এইসব ঘটনাক্রমে ভারত পাকিস্তানের চক্ষুশূল হয়ে উঠলো।

অন্যদিকে প্রায় ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন শরনার্থী পালিয়ে এল ভারতে। এই বিপুল শরনার্থীর ঢল সহ্য করার ক্ষমতা তখন নড়বড়ে ভারতীয় অর্থনীতির ছিল না। স্বভাবতই ভারত সাহায্য চাইল বিশ্বের। কিন্তু আমেরিকার চাপে একমাত্র রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ সাহায্যে রাজী হলো না।
পাক সেনা, আলবদর, রাজাকার যৌথ অত্যাচারে ও সরাসরি যুদ্ধে মারা গেল প্রায় ৩০০০০০০ বাংলাদেশী। প্রায় ন মাস পরে অধৈর্য পাকিস্তান ভারতের সেনাঘাঁটির ওপরে হামলা চালালো। বাধ্য হয়ে ৩৬৫০০০ পাক আর্মির বিরুদ্ধে ৫০০০০০ সৈন্য নামিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলো ভারত। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ মাত্র তেরো দিন স্থায়ী হলো দুই প্রতিবেশীর লড়াই, যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী পৃথিবীর হ্রস্বতম যুদ্ধ। অসংখ্য ক্ষয়ক্ষতির পরে নতি স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করল পাকিস্তান। বাঙাল দেশে নামলো একচোখে স্বজন হারানোর জলের ধারা, অন্যচোখে স্বাধীনতার আনন্দের উচ্ছাস। মুজিব কে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো স্বৈরশাসক। কিন্তু নতুন ইতিহাস সূচনার মধ্যেও রয়ে গেল ভয়ংকর দানবের জন্মের বীজ।

৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ন মাস, আর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন। মুখে যতই লম্ফঝম্প করুক, পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো যথেষ্ট মজবুত ছিল না। অন্যদিকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ক্ষোভের বিস্ফোরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিকামীতায়। মুক্তিবাহিনীর যে দ্বিতীয় শাখা গেরিলা বাহিনী তারা তৈরী করেছিল, তা মূলত ছিল কিশোরদের নিয়ে। রাস্তায়, গলিতে, গ্রামের শুঁড়িপথে, পাহাড়ী এলাকায়, জঙ্গলে পাকিস্তান আর্মিকে আচমকা আক্রমণ করে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি সাধণই ছিল এর মুখ্য উদ্দেশ্য। আর সামনে পেছনে আক্রমণ সামলানোর মত অভিজ্ঞতা পাকিস্তানী সেনার ছিল না। এছাড়া পাক শুষ্ক জলবায়ু তে অভ্যস্ত পাঠান ও পাঞ্জাবীরা বঙ্গীয় জলীয় আবহাওয়া বরদাস্ত না করতে পেরে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ত। আর এর ওপর ছিল ভারতের বেসরকারী বিরোধিতা। ফল যুদ্ধ অচিরেই তাদের হাতছাড়া।

৭১ এর মার্চে যখন পাক সেনা ঝাঁপিয়ে পড়ল, কিম্বা অত্যাচার চালাতে শুরু করল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভারত প্রথমে সরকারীভাবে নাক গলায় নি। আমেরিকা হুমকি দিয়ে রেখেছিল, পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয়ে কেউ যেন নাক না গলায়, বিদ্রোহীদের (গণতন্ত্রের পীঠস্থান ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা ভোটে জেতাদের বিদ্রোহী আখ্যাই দিয়েছিল।) কেউ যেন সাহায্য না করে। কিন্তু সরকারীভাবে সাহায্য না করতে পারলেও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ চলছিলই। এই সময়ে পাক সেনা ও তাদের সহযোগীদের অত্যাচারে হু হু করে আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পেরিয়ে আসতে শুরু করল বিপুল পরিমাণে শরণার্থী।
এপারের মানুষের সঙ্গে ওপারের বাঙালির আত্মীয়তা কোনোদিনই কোনো সীমানা মানেনি। তাই সবচেয়ে বেশী বাস্তুহারা এলো আসাম আর পশ্চিমবঙ্গে। স্বাধীণতার পরবর্তী বিপর্যস্ত আর্থিক অবস্থার প্রভাব এ বঙ্গেও পড়েছিল। বেকার সমস্যা, মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পসমস্যা, ভূমিসমস্যায় এপারের বাঙালির দৈনন্দিন কাঠামো নাজেহাল। তবুও স্বজনের ওপর অত্যাচার দেখে দুহাত বাড়িয়ে তারা ঠাই দিল ঘরহারাদের। এপারের অতিরিক্ত জমিতে তারা বাসা বাঁধতে শুরু করল। মুজিব গ্রেপ্তারের পরে বেশ কিছু প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা এপারে পালিয়ে এসেছিলেন। এখান থেকেই ঘোষিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীণ বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল কলকাতাতেই। সব জেনেও মানবতার খাতিরে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এপারের বামপন্থী দলগুলো তো সক্রিয় সাহায্যে নেমে পড়েছিল অসহায় সেই মানুষুগুলোর পাশে।
ভারতের এই ইনডাইরেক্ট সমর্থন পাক সরকার বা তার গুরু ইয়াংকি সরকার ভালোভাবে মেনে নেয় নি। তাই ডিসেম্বরে পাকিস্তান ভারতের সেনাঘাটিতে আক্রমণ করার পরে ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করলে আমেরিকা তার সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভারতকে শায়েস্তা করার কথা ঘোষণা করে দিল। এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোজা তারা আমেরিকাকে হুমকি দিল, যদি আমেরিকা উপসাগরীয় অঞ্চলে বা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নৌবহর পাঠিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করে তাহলে রাশিয়াও তাই করবে এবং ফলশ্রুতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব দায়ভার আমেরিকার ওপরেই বর্তাবে। হুমকিতে কাজ হল এবং ইউএসএ পিছিয়ে গেল। দুর্বল পাকিস্তান তেরদিনের বেশী যুদ্ধ টানতে পারল না। কিন্তু নাছোড় আমেরিকা তখন হাতে না মারতে পেরে ভাতে মারার পরিকল্পনা করে ভারত ও সদ্য ভূমিষ্ঠ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধের প্রাচীর তৈরী করল সহযোগী দেশদের নিয়ে। ফলত যুদ্ধ পরবর্তী এই দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠল।

অতীতে বারবার দেখা গেছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলেরা ভারত জুজু আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলেরা ভারত জুজু বা পাক জুজুর ভয় দেখিয়ে মানুষের স্বাভাবিক ক্ষোভকে অন্যদিকে চালিত করে তাৎক্ষণিক ভোলানোর চেষ্টা করেন। আর এই জুজুর ভয়ের ওপরের মোড়কটাই হলো ধর্মীয় বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভুত ভয়। অশিক্ষিত নিরক্ষর মানুষ বিদেশী ভাষায় লিখিত ধর্মগ্রন্থের সদভাবটুকু আত্মস্থ করতে পারেন না, না জানার ফলে, আর সেখানেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধি ও ক্ষমতা দখলের জন্য চলে কিছু অসৎ মানুষের বিকৃত ব্যাখ্যা। এমনকি খেলার মত নির্দোষ আমোদেও এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থর চেষ্টা লক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এই তিনদেশের সাধারণ মানুষ ধান্দাবাজ নন। তারা সহজ, সরল, অমায়িক, অতিথিবৎসল। এক দেশের মানুষ অপর দেশের মানুষকে কাছে পেলে বুকে জড়িয়ে ধরেন আত্মীয়স্বভাবে। তাদের মধ্যে বিদ্বেষের লেশমাত্রও পরিলক্ষিত হয়না।

ভূমি ভাগ হয় না। মানুষই তাঁকে বিভিন্ন দাগ টেনে বিভক্ত করে নিজের কুমতলব চরিতার্থের উদ্দেশ্যে। কিন্তু চরিত্রগত মিল থেকে যায় সব টুকরোর মধ্যেই। পাকিস্তান যখন অন্ধকারে ডুবছে, তখন তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বাংলাদেশও তলিয়ে যেতে বসেছে সেই একই কালোয়। বলা যায় প্রায় একই সময়ে ভারতে ইন্দিরা, পাকিস্তানে জুলফিকার আলি ভুট্টো এবং বাংলাদেশে মুজিবর রহমান তাঁদের রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেন। ভাগ্যের পরিহাস তাঁদের তিনজনকেই মিলিয়ে দিয়েছে অস্বাভাবিক অকাল প্রয়াণে। আশ্চর্যজনক ভাবে তিনজনকেই হত্যার পিছনে কারন হিসেবে কাজ করেছে ক্ষমতা দখলের অত্যাধিক লোভ।

যখন থেকে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে মিলিটারী স্বৈরশাসন আমদানি হলো, তখনই উপমহাদেশের স্থায়ী অস্থিরতার ভবিষ্যত জন্ম নিয়েছিল। আয়ুব খান জমানা শেষে ইয়াহিয়া খান জমানা এবং বাংলাদেশের জন্মকে কাজে লাগিয়ে সেদেশে তৎপর হয়ে উঠলো কট্টরপন্থী ধর্মীয় দল জামাত-ই-ইসলামী। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ভেঙে বেরিয়ে আসার আসল কারন চিহ্নিত করার কোনো চেষ্টাই দেখা গেলনা সেখানে। পাকিস্তানী শাসকদের অকর্মণ্যতা, শোষণ, ঔপনিবেশিক আচরণ ও জবরদস্তি ইত্যাকার মূল কারনের অভিঘাত আড়াল করে দায় চাপানো হল, ইসলামিক পথ থেকে বিচ্যুতি এবং ইয়াহিয়া খানের মদ্যপানে আসক্তি। অথচ এই দুই কারনই যে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর তা বোঝার ক্ষমতা সে দেশের সাধারণ মানুষের ছিলনা অশিক্ষার জন্য।

১৯৭১ এ যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের পরে প্রধাণমন্ত্রীর আসনে বসলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। ক্ষমতায় বসেই তিনি শ্লোগান তুললেন, “Islam is our faith, democracy is our polity, socialism is our economy” । যদি সত্যিই এই নীতি কার্যকর করা যেত তাহলে হয়তো শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র উপমহাদেশ আজকের এই ভয়ংকর অস্থিরতার হাত থেকে রেহাই পেয়ে সত্যিকারের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ভুট্টোর এই প্রতিশ্রুতির অন্তরালে ইতিহাসের অট্টহাসি সেদিন শোনা যায়নি।

আগেই বলেছি বাংলাদেশ বিভক্তিকরনের দায় হিসেবে দুই অযৌক্তিক কারন কিন্তু রীতিমত পাকা ভিত গড়ে তুললো মৌলবাদের। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে মান্যতা পেতে শুরু করলো ঐ তত্ত্ব। বিদ্রোহ ছড়িয়ে গেল এমনকি সেনার মধ্যেও। ১৯৬৫ র পরে সমাজের নিম্নস্তর থেকে নিযুক্ত কিছু জুনিয়ার অফিসার এই ইস্যুতে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করল। পর্দার আড়ালে সেই প্রথম জামাতের ক্ষমতা দখলের প্রয়াস। কিন্তু তখনো সেনার সর্বস্তরে জামাতের সেরকম প্রভাব না থাকায় অচিরেই বিদ্রোহ দমিত হলো।

ক্ষমতা দখলের মরীয়া প্রচেষ্টায় জামাত এবার অন্য চাল দিল। সেনাবাহিনীর উচ্চস্তরে তারা তাদের উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ছড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করায় মন দিলো আর সফলও হলো। এই পর্বে জামাতের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্বঘোষিত উগ্র ধর্মগুরু মউদুদি। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির দাবার প্রথম চালেই তিনি মাত করে দিলেন মধ্যপন্থার ভুট্টোকে। ক্ষমতার নেশা ধরিয়ে নিজের দিকে টেনে আনতে সমর্থ হলেন সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তা জেনারেল মুহম্মদ জিয়া উল হক কে। তলে তলে সেনাবাহিনীর ধর্মীয়করন শুরু করে দিলেন জিয়া। ১৯৭৬ এর জুলাইয়ে সেনার এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জয়ীরা পুরস্কার পেলেন মউদুদির লেখা প্রচার পুস্তিকা তাফহিমু-ই-কুরান। শুধু তাই নয়, সেই অন্ধ প্রচার পুস্তিকা, যা কিনা কোরানের মহতী আদর্শ থেকে যোজন দূরে এবং শুধুমাত্র যেন তেন উপায়ে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই লিখিত, সুপারিশ করা হলো সেনার ক্যাপ্টেন ও মেজর পদের প্রোমোশনের পরীক্ষার পাঠ্যপুস্তক হিসাবে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে পাকসেনা পরিবর্তিত হতে থাকলো অন্ধ ধর্মীয় হানাদলে।

এবার চোখ ফেরানো যাক আরো একবার পূর্বে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরেই বাংলাদেশের চেহারা ছিল ধর্ষিতা জননীর মতো। আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিনের পাতায় চোখ বুলালে দেখতে পাই, Time Magazine USA 17-January -1972 : “In the aftermath of the Pakistani army’s rampage last March, a special team of inspectors from the World Bank observed that some cities looked “like the morning after a nuclear at tack.” Since then, the destruction has only been magnified. An estimated 6,000,000 homes have been destroyed, and nearly 1,400,000 farm families have been left without tools or animals to work their lands. Transportation and communications systems are totally disrupted. Roads are damaged, bridges out and inland waterways blocked.The rape of the country continued right up until the Pakistani army surrendered a month ago. In the last days of the war, West Pakistani-owned businesses—which included nearly every commercial enterprise in the country—remitted virtually all their funds to the West. Pakistan International Airlines left exactly 117 rupees ($16) in its account at the port city of Chittagong. The army also destroyed bank notes and coins, so that many areas now suffer from a severe shortage of ready cash. Private cars were picked up off the streets or confiscated from auto dealers and shipped to the West before the ports were closed.”

এই ছন্নছাড়া অবস্থা থেকে সুস্থ দেশ গড়ে তোলা ছিল সেই সময়কার নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ। দেশ চালানোর ভার হাতে পেয়েই তাঁরা প্রথম খাদ্য এবং চিকিৎসা এই দুই প্রাথমিক চাহিদার ওপরেই প্রাধান্য ন্যস্ত করলেন। কিন্তু ভাঁড়ার সম্পূর্ণ শূন্য। এ অবস্থায় সাহায্য চাওয়ার আর অন্য কোনো বিকল্পই সামনে খোলা ছিল না। স্বভাবতই সাহায্যের জন্য শেখ মুজিবর রহমান আবেদন জানালেন রাষ্ট্রসংঘ, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা, ইউনাইটেড কিংডম সহ ইউরোপের ধনী দেশগুলির কাছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে গড়ে তুললেন সখ্য। প্রতিবেশী অন্য দেশগুলির সঙ্গেও সদ্ভাব বজায় রাখার নীতি গৃহীত হলো। পশ্চিম পাকিস্তানের এতদিনের ঔপনিবেশিক নীতি থেকে দেশ কে বার করে আনার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলো।

জাতীয়তা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র এই চার স্তম্ভের ওপর গড়ে তোলা হলো নতুন সংবিধান, যা অন্য দেশে মুজিবিসম নামে খ্যাতি পেয়ে গেল। ১৯৭৩ সালে স্বাধীণতা পরবর্তী বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো প্রথম সাধারণ নির্বাচন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করল আওয়ামি লীগ। প্রধানমন্ত্রী হলেন মুজিব। খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল, বিদ্যুৎ, নিকাশী ব্যবস্থা, ১০ লক্ষ উদাস্তুর পুনর্বাসন লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য পদক্ষেপ নিল নতুন সরকার। প্রায় ৯০ শতাংশ দরিদ্র এবং দরিদ্রেতর মানুষের দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিল না সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।

তলেতলে দানা বাঁধল ষড়যন্ত্র। পরাজিত পাকিস্তানের বেশ কিছু এজেন্ট রয়ে গেছিল ছদ্মবেশে। এছাড়া ছিল পাকিস্তানপন্থী জামাত ই ইসলামীর মতো কট্টর মৌলবাদী দল। তাদের মদত দিল আমেরিকা। ১৫ই আগষ্ট, ১৯৭৫, আমেরিকার সেন্ট্রাল ইন্টালিজেন্স এজেন্সি এবং পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ আর্থিক ও অন্যান্য মদতে এবং ঢাকাতে আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইউজিন বুস্টারের উপস্থিতিতে খোন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্ররোচনা এবং নেতৃত্বে একদল ধর্মোন্মাদ তরুন মিলিটারী অফিসার ট্যাংক ও সবরকম অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ফেললো ঢাকায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ী। মুজিব সহ তাঁর পরিবারের উপস্থিত সমস্ত সদস্য কে হত্যা করল উন্মাদের দল। বেঁচে গেলেন শুধু পশ্চিম জার্মানিতে প্রবাসী দুই কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও শেখ রেহানা। বাংলাদেশে তাঁদের ফেরা নিষিদ্ধ ঘোষনা করে সামরিক অভ্যুথানের নায়ক পাকিস্তানপন্থী খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ হলেন স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আবার ডুবে গেল অশিক্ষা, দারিদ্র্য, ধর্মীয় মৌলবাদের অতল কালো অন্ধকারে।

ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে এসেছেন অথচ তারপরেই ধর্ষিত হয়েছে সেই গণের জন্য, গণের দ্বারা, গণের কৃত তন্ত্র। পীড়িত নাগরিকের কাছে মূলত ক্ষমতা থেকে ক্ষমতার পরিবর্তনের সময়েই গণতন্ত্রের মহিমা কীর্তিত হয়েছে। আর গণতন্ত্রের ছত্রছায়াতে নিঃশব্দে রোপিত হয়েছে বিষবৃক্ষ। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে স্ব উদ্দেশ্য সিদ্ধির মারপ্যাঁচ এতটাই জটীল অঙ্ক যে তার জট খুলতে তাবড় চিন্তাবিদও হিমসিম খেয়ে যান।

মৌলবাদ মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসলো আরো একবার উপমহাদেশের সবচেয়ে বাংলাদেশেও।
(©সৌমিত্র চক্রবর্তী)

One comment

  1. সৎ সাংবাদিকতার জন্য নিউজ বার্তামেলাকে শুভকামনা ও অভিনন্দন অফুরান।

আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল প্রকাশ করা হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *

*